ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

পেকুয়ায় পাউবোর বেড়িবাঁধে মাটি ভরাট কাজে অনিয়ম

*সিংহভাগ বরাদ্দ লুটে নিতে পাউবোর কর্মকর্তারা তৎপর, *কাজের তদারকীতে নেই পাউবো কর্তারা. *ঠিকাদারের ইচ্ছেমতো কাজ হচ্ছে, জনমনে ক্ষোভ

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া-কুতুবদিয়া:

কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের জালিয়াখালী থেকে কাটাফাঁড়ী ব্রীজ পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নিয়ন্ত্রণাধীন প্রায় ১৪’শ মিটার পুরানো বেড়িবাঁধে মাটিদ্বারা ভরাটের কাজে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

পাউবো’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এমনটাই অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। অভিয়োগ রযেছে, পাউবো’র কর্মকর্তাদের সাথে আঁতাত করে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছেমতো সাব-কন্টাকে দিয়ে বেড়িবাঁধে মাটি ভরাটের কাজ করাচ্ছেন। বাঁেধ মাটি ভরাটের কাজের ডিজাইন ও শিডিউল মোতাবেক না করে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করায় বেড়িবাঁধের স্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বাঁধের পাশে বসবাসরত লোকজন। এভাবে গত এক মাস ধরে ঠিকাদার নিজের ইচ্ছেমতো বেড়িবাঁধে মাটি ভরাটের কাজ করলেও পাউবো’র কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারণে অনিয়ম বন্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পাউবো’র কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও গাফিলতির কারণে বেড়িবাঁেধ মাটি ভরাটের কাজ টেকসই হচ্ছেনা। জানা যায়, কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের কয়েক’শ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বান্দরবান পাউবো থেকে নিয়ন্ত্রণ ও সংস্কার করা হয়।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাস ধরে বান্দরবান পাউবো থেকে জরুরী মেরামত কাজের অংশ হিসেবে নিজেরা ঠিকাদার মনোনীত করে উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়নের জালিয়াখালী গ্রাম থেকে পশ্চিম গোঁয়াখালী কাটাফাঁড়ী ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ১৪’শ মিটার পুরানো বেড়িবাঁধে এস্কেভেটর (এক প্রকার খনন যন্ত্র) দিয়ে মাটিদ্বারা ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। বাঁধের গোড়া থেকে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে, আবার সেই মাটি বাঁধে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে ধ্বসে পড়ছে এভং ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। একেবারে দায়সারা কাজ করায় বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে শুরুতেই জনমনে পাউবোর ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাউবোর বান্দরবান জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী ও পেকুয়া শাখা কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী জমির হোসেন এর যোগসাজশে ঠিকাদার অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে বেড়িবাঁধে মাটি ভরাটের কাজ বাস্তবায়ন করছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বান্দরবান নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কর্মরত ও পেকুয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখা কর্মকর্তা উপ-সহকারী প্রকৌশলী জমির হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও ঠিকাদার মাটি ভরাটের কাজ শেষ করেনি। কাজ চলমান রয়েছে। আমার জানা মতে, বেড়িবাঁধে মাটি ভরাটের কাজে এখন পর্যন্ত কোন অনিয়ম হয়নি। এতে আমাদের নজরদারী রয়েছে। ঠিকাদার কাজ শেষ করলে বুঝা যাবে অনিয়ম হয়েছে কিনা।

জানা যায়, দীঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন অবস্থায় ছিল বেড়িবাঁধটি। সম্প্রতি পেকুয়ায় ভয়াবহ বন্যার পর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেটি পাউবো জরুরী বরাদ্দের আওতায় ১৪’শ মিটার বেড়িবাঁধে মাটি ভরাটের কাজ করছেন। আর পাউবো নিজেদের পছন্দমতো ঠিকাদারও নিয়োগ করেছেন। এছাড়া পেকুয়ার আরো বিভিন্ন ইউনিয়নে পাউবোর জরুরী বরাদ্দের আলোকে মাটি ভরাটের কাজেও ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসলে পাউবো’র সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মকার্তারা জরুরী বরাদ্দ এনে নিজেদের ইচ্ছেমতো ঠিকাদার নিয়োগ করে দায়সারা মাটি ভরাটের লোক দেখানো কাজ লাখ লাখ টাকা পকেটে ভরলেও এ নিয়ে কোন ধরনের মাথা ব্যথা নেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বেশ কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধি বলেন, পেকুয়া সদরের জালিয়াখালী থেকে কাটাফাঁড়ি ব্রীজ পর্যন্ত বেড়িবাঁধে মাটি ভরাট কাজে পাউবো’র কোন তদারকী নেই। মাটি কাটার সময় বাঁেধর দুই সাইটে সুল্ভ পর্যন্ত কেটে বাঁেধর উপর দেওয়া হয়েছে। এরফলে বাঁেধর মাঝখানে ফাটল ধরেছে। বাঁধের দুই সাইটে ও মাটি ধ্বেবে গেছে। বাঁেধর দুই পাশ থেকে অত্যন্ত নরম মাটি বাঁেধ দেওয়ায় কাদার কারণে মানুষের যাতায়াত বিছিন্ন হয়ে গেছে।

বেড়িবাঁধে মাটি ভরাট কাজে অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে ঠিকাদারী প্রতিষ্টান আয়েশা কনস্ট্রাকশনের মালিকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।

পাউবো’র শাখা কর্মকর্তা জমিরের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে কক্সবাজারের আয়েশা কনস্ট্রাকশন নামের একটি প্রতিষ্টান সাব কন্টাকে বেড়িবাঁধে মাটি ভরাটের করায় সিডিউল অনুযায়ী করা হয়নি মাটি ভরাট ও মাটি কম্পেক্ট। যার কারণে ইতোমধ্যে মাটি ধ্বেবে যাচ্ছে। এছাড়া সিডিউল অনুসারে রাখা হয়নি লিভার সাইটের দৈর্ঘ্য, ডাউন সাইটের দৈর্ঘ্য, বেড়িবাঁধের টপের প্রস্থ। স্থানীয়রা জানান, তড়িঘড়ি করে যেনতেন কাজ করে সরকারী অর্থ লোপাটের চেষ্টায় মেতেছে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্টান ও পাউবোর কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্তা। এব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বলেন, জরুরী মেরামত কাজের অংশ হিসেবে পেকুয়ার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধে মাটি ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। তবে এখনো ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজ বুঝিয়ে নেওয়া হয়নি এবং বিল ও দেয়া হয়নি। বরাদ্দ চেয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র পাঠানো হয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, কাজে অনিয়মের সুযোগ নাই। কাজ দেখার জন্য পাউবো’র আলাদা একটি কমিটি আছে। কমিটি সরেজমিন তদন্ত করেই কাজ দেখার পর ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জুলফিকার তারেক কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, পেকুয়ায় বেড়িবাঁধের কাজে অনিয়ম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেড়িবাঁধের কাজে অনিয়ম হলে ছাড় নাই।

 

 

পাঠকের মতামত: